ভারতবর্ষ! এক অদ্ভুত দেশ। দেশই শুধু নয়, একে উপমহাদেশ বলেও অভিহিত করা হয়। এই দেশে অনেক কিছুই আছে। আর তার উলটো পিঠে না থাকার ঘরও মোটামুটিভাবে কানায় কানায় ভরা। ভারতের সংবিধানে সবপ্রথমেই দেশের নাম সম্বন্ধে বলা হয়েছে - "India, that is Bharat" - অর্থাৎ, দেশের নামটা হলো ইন্ডিয়া, মানে ভারত। সমস্যাটা হলো যে এই দেশে আজকাল দু-ধরণের নাগরিক সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম দল, ইণ্ডিয়ান আর দ্বিতীয় দল, ভারতীয়। এই দু-ধরণের লোককে চিনতেও কারুরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ইণ্ডিয়ানদের চেহারা-চরিত্তির দেখলেই বোঝা যায় যে এনারা বেশ রসেবসেই আছেন। এদের বেশ নাদুসনুদুস, গোলগাল, তেল-চিকচিকে চেহারা, পকেটের মানিব্যাগে রকমারি কার্ড, গোটাদুয়েক মোবাইল ফোন ইত্যাদি থাকে। এরা শপিং মলে শপিং করতে যান। বাজারে একটু "মার্কেটিং" করতে যান আর, মোটামুটি সবসময়ই এরা যানের ওপরেই থাকেন। খুব কদাচিৎ, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, এর হাঁটতে বেরোন। এরা ছাড়াও এই দেশেই আরেক ধরণের লোকও দেখতে পাওয়া যায়। এরা হলেন ভারতীয়। এদের চেহারা, সাজপোষাক ইণ্ডিয়ানদের মতন অতো চকচকে নয়, বরং বেশ মলিনই বলা যায়। কথাবার্তায়ও এরা পিছিয়ে, মানে বেশীরভাগ সময়ই নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। এরাও মাঝেমধ্যে শপিংমলে যান। তবে "শপিং" করতে নয়, বেড়াতে অথবা কোন কাজে, যেমন ইলেকট্রিকাল ওয়ারং বা সাফাই এর কাজ।
গ্যাপ শোভন চক্রবর্তী
এই দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। বছর ঘুরতেই এখানে বিলিওনেয়ার, মানে শতকোটিপতি, লোকের সংখ্যা বেড়েই চলে, আর এরচেয়েও বেশী গতিতে বাড়ে কোটিপতির সংখ্যা। এই দেশ থেকে রপ্তানীর পরিমাণ লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। এমনকি, যখন সমস্ত পৃথিবী আর্থিক মন্দায় ভুগছিলো, তখনও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির গতি খুব একটা ব্যাহত হয় নি। এদেশে গাড়ির বাজার, বাড়ির বাজার, কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্সের বাজার, শপিং মল, অর্গানাইজড রিটেল - এই সবকিছুই বেড়ে চলেছে। ফারাকটা হলো বৃদ্ধির গতি কোনওটার বেশী, কোনওটার একটু কম। তা এরকম উজ্জ্বল নক্ষত্রসুলভ দেশের সবকিছুই তো ঝাঁ-চকচকে হওয়া উচিত। আসলে তো তা নয়। সেই যে, প্রথমেই বললাম না, এটা একটা অদ্ভুত দেশ!
শোভনের চোখে ভারত
এই চাকচিক্যপূর্ণ বাইরের সাজের ভেতরে লুকিয়ে আছে আরেকটা ভারত। যে ভারতে লোকেরা দিনে বত্রিশ টাকা আয় করতে পারলেই আর গরীব বলে গণ্য হয় না। যে ভারতের অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। রেস্তোরাতে গিয়ে খাবার রেস্তো এদের তো নেই-ই, বেশীরভাগ দিনই এরা অনাহারে বা অর্ধাহারে কাটিয়ে দেয়! ইণ্ডিয়া সম্বন্ধে এরা খুব বেশী কিছু জানেই না। হয়তো এক-আধজন বলতে পারবে যে ইণ্ডিয়াটাই আমাদের দেশ। এদের কাছে দেশের নাম ভারত, ভারতবর্ষ, হিন্দুস্তান ইত্যাদি।
ভারত আর ইণ্ডিয়া ধনী গরিব
এই ভারতের জনতা কিন্তু জিডিপির গ্রোথ বোঝে না। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইনডেক্স বাড়লো না কমলো, সেটা নিয়েও এদের মাথাব্যথা নেই। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়া-কমা, এদের জীবনের ওপর খুবই বেশী প্রভাব ফেলে। প্রণব মুখার্জি যে প্রতিভা পাটিলের জায়গায় রাষ্ট্রপতি হলেন বা মনমোহন সিং যে এখন নিজেই অর্থমন্ত্রক সামলাবেন, তাতে এদের কিছুই জায় আসে না। কিন্তু সরষের তেলের লিটার যে পঁচাশি টাকা থেকে এক লাফে একশ কুড়ি টাকা হয়ে গেলো, তার ফলে এদের খাওয়ার পরিমাণটা কিন্তু কমে গেলো।
ভারত কোটি বত্রিশ টাকা দরিদ্র প্রণব মুখার্জি
যখন ইণ্ডিয়ানরা বার, পাব বা নাইটক্লাবে গিয়ে হাজার-হাজার টাকা ওড়াচ্ছে, তখন ভারতীয়ের চোখে ঘুম জোর করেও আসে না। কারন রাত ফুরোলেই আরেকটা দিন শুরু হবে। আর দিনের সাথে সাথে আবারো নতুন করে শুরু হবে ভারতীয়দের জীবন সংগ্রাম। আবার বেঁচে থাকার যুদ্ধ। ভারত অলিম্পিকে মেডেল পেলে ভারতীয়দের পেটের ক্ষিদে কমবে না, বা মুখে দুগ্রাস ভাতও কেউ তুলে দেবে না। যা করার, নিজেকেই করতে হবে। এ অলিম্পিকের চেয়েও হাজারগুণ কঠিন প্রতিযোগিতা। শুধু জিতে গেলেও সোণার মেডেল পাওয়া যায় না, পত্রিকা বা টিভিতেও মুখ দেখানো যায় না। কিন্তু আরেকটা দিনের সূর্য উঠতে দেখা যায়। আরেকটা রাতের চাঁদের আলোটা চোখে পড়ে। বাড়িতে থাকা সঙ্গীর সাথে আরো দুটো মিঠে কথা বলতে পারা যায়। ছেলেমেয়েকে আরেকটু আদর করা যায়। বুকভরে আরো নিশ্বাস নেওয়া যায়। জীবনটা আসলে যেকোনও অলিম্পিক বা বিশ্বকাপের থেকে বড় খেলা আর বিজয়ীর পুরস্কারও অনেক বেশী দামী।
ভারত আর ইণ্ডিয়া ধনী গরিব
এই ভারতের জনতা কিন্তু জিডিপির গ্রোথ বোঝে না। ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইনডেক্স বাড়লো না কমলো, সেটা নিয়েও এদের মাথাব্যথা নেই। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়া-কমা, এদের জীবনের ওপর খুবই বেশী প্রভাব ফেলে। প্রণব মুখার্জি যে প্রতিভা পাটিলের জায়গায় রাষ্ট্রপতি হলেন বা মনমোহন সিং যে এখন নিজেই অর্থমন্ত্রক সামলাবেন, তাতে এদের কিছুই জায় আসে না। কিন্তু সরষের তেলের লিটার যে পঁচাশি টাকা থেকে এক লাফে একশ কুড়ি টাকা হয়ে গেলো, তার ফলে এদের খাওয়ার পরিমাণটা কিন্তু কমে গেলো।
ভারত কোটি বত্রিশ টাকা দরিদ্র প্রণব মুখার্জি
যখন ইণ্ডিয়ানরা বার, পাব বা নাইটক্লাবে গিয়ে হাজার-হাজার টাকা ওড়াচ্ছে, তখন ভারতীয়ের চোখে ঘুম জোর করেও আসে না। কারন রাত ফুরোলেই আরেকটা দিন শুরু হবে। আর দিনের সাথে সাথে আবারো নতুন করে শুরু হবে ভারতীয়দের জীবন সংগ্রাম। আবার বেঁচে থাকার যুদ্ধ। ভারত অলিম্পিকে মেডেল পেলে ভারতীয়দের পেটের ক্ষিদে কমবে না, বা মুখে দুগ্রাস ভাতও কেউ তুলে দেবে না। যা করার, নিজেকেই করতে হবে। এ অলিম্পিকের চেয়েও হাজারগুণ কঠিন প্রতিযোগিতা। শুধু জিতে গেলেও সোণার মেডেল পাওয়া যায় না, পত্রিকা বা টিভিতেও মুখ দেখানো যায় না। কিন্তু আরেকটা দিনের সূর্য উঠতে দেখা যায়। আরেকটা রাতের চাঁদের আলোটা চোখে পড়ে। বাড়িতে থাকা সঙ্গীর সাথে আরো দুটো মিঠে কথা বলতে পারা যায়। ছেলেমেয়েকে আরেকটু আদর করা যায়। বুকভরে আরো নিশ্বাস নেওয়া যায়। জীবনটা আসলে যেকোনও অলিম্পিক বা বিশ্বকাপের থেকে বড় খেলা আর বিজয়ীর পুরস্কারও অনেক বেশী দামী।
Very nice piece. Keep it up
ReplyDeleteThanks sir, for your kind words!
Delete