Thursday, May 17, 2012

শিক্ষা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং কি শিক্ষা?

দিন আগে থেকেই আমাদের ছোটকালে শোনা একটা কথা মনে পড়ছিলো। অনেকেই বলতেন যে আগের দিনের - ম্যাট্রিক পাশের ভ্যালু নাকি আজকালের গ্র্যাজুয়েটের থেকে বেশী। তা আগের দিন বলতে কোন সময়টাকে বোঝায়। একটু বেশী বয়সিদের কাছে আগের দিনের মানে ধরে নিন ঐ বৃটিশ আমল-টামল কিছু একটা হবে। তার থেকে একটু কমবয়সী এবং যারা সাহেবদের কাছে পড়ার সুযোগ পান নি, তাদের কাছে আগের দিন মানে হলো ঐ ১৯৪৭ থেকে শুরু করে পনেরো-কুড়ি বছর আগে পর্যন্ত সময়কালটা। তবে, একটা জিনিসে এরা সবাই একমত হতেন যে পড়াশুনোর সিস্টেমটা জাহান্নামে গেছে। আজকাল নাকি কথায় কথায় সবাই লেটার মার্কস (মানে আশি শতাংশ) পেয়ে যায়, অথচ জ্ঞানের বেলায় নাকি ঢুঢু।

তা কথাটা মনে পড়ার কারনটা হলো যে কোনও এক জায়গায় আমিও মোটামুটি ওরকমই কিছু একটা বলে বসেছি। তারপর থেকেই ভাবছিলাম, এতো তাড়াতাড়ি আমাকেও এই দোষে পেয়ে গেলো নাকি রে বাবা। অবশেষে স্টেটমেন্টটা ভালো ভাবে দেখে চিন্তামুক্ত হলাম। নাঃ, আমি আমাদের সময়ে সবই ভালো ছিলোর রোগে আক্রান্ত হই নি। অন্ততঃ এখনো। আমি গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই অকর্মার ঢেঁকি বলে মনে করছি, আর এর মধ্যে কোনও স্থান-কালের ভেদাভেদ নেই। হঠাৎ করে এতো জেনারেলাইজড কথা কেনো বললাম? সেটা বলার জন্যেই এই লেখা।

২০০৬-০৭ সাল নাগাদ বিখ্যাত ম্যাকিনসি কোম্পানি বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটা রিপোর্ট বের করেছিল। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের মধ্যে মাত্র পঁচিশ শতাংশ, জেনারেল গ্রাজুয়েটদের মাত্র দশ শতাংশ আর ফিনান্স গ্রাজুয়েটদের পনেরো শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী এমপ্লয়েবল, অর্থাৎ কিনা যাদের সোজাসুজি কাজ করতে নামিয়ে দেওয়া যায়। বাকিদের মধ্যে আরো ষাট থেকে সত্তর শতাংশকে উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে কাজের বাজারের উপযোগী করে তোলা যায়। আর সব শেষের পাঁচ থেকে দশ শতাংশকে দিয়ে কোনও কাজই হবে না বলে ওই রিপোর্টে লেখা হয়।

Thursday, May 3, 2012

নবাব সিরাজদৌল্লা বনাম মীরজাফর - এক নিরপেক্ষ মূল্যায়ণের প্রয়াস

সিরাজদৌল্লা
দু-তিনদিন আগেই একজন ভদ্রলোকের সাথে অনলাইনে আলোচনা হচ্ছিলো। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো ভারতে ইংরেজদের ব্যবসা করতে আসা এবং সময়-সুযোগমত রাজা হয়ে বসা। এই যখন আলোচনার বিষয়, তখন ১৭৫৭ সালের কথা তো উঠবেই। আর ১৭৫৭ এর পলাশীর যুদ্ধের কথা উঠলেই আমাদের কাছে রেডিমেড ট্র্যাজিক হিরো আর ভিলেনও হাতেগরম হাজির - সিরাজদৌল্লা আর মীরজাফর। হিরোপূজার আতিশয্যে সিরাজকে, বিশেষতঃ বাঙ্গালিরা, মোটামুটিভাবে অরণ্যদেবের মতন এক আদর্শ যোদ্ধা, নেতাজির মতন স্বাধীনতা সংগ্রামের অধিনায়ক আর বিবেকানন্দের কাছাকাছি দৃঢ় চরিত্রের লোক বলে বর্ণনা করতেই ভালবাসেন। আর মীরজাফর হলো গব্বর সিং, শাকাল, মোগাম্বো, নাথুরাম গডসে - এদের সবার সংমিশ্রণে তৈরী এক সুপার ভিলেন। এ এক এমনই ভিলেন, যে মোটামুটি অপরাজেয় হিরোকেও হার মানতে বাধ্য করে। তারপর সেই হিরোর মুণ্ডচ্ছেদও করে ফেলে। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় কল্পনাশ্রিত মিথ, যার সঙ্গে হয়তো সত্যিকারের ইতিহাসের কোনও সম্পর্কই নেই।
battle of plassey 1757
মীরজাফর
যদিও পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের জন্য শুধুমাত্র মীরজাফরই দায়ী ছিলেন না, আরো অনেক প্রভাবশালী ষড়যন্ত্রকারীর মাঝে মীরজাফরও অন্যতম ছিলেন, কিন্তু সেই যে যুদ্ধের সময় থেকে বাংলায় এবং পরবর্তীতে মোটামুটি সমস্ত ভারতেই মীরজাফরের গায়ে বিশ্বাসঘাতকতার ছোপটা লেগে গেলো, আজ পর্যন্তও সেটাকে ওঠানো যায় নি। আর বাংলা ভাষাতে মীরজাফরের মানেই দাঁড়িয়ে গেলো বিশ্বাসঘাতক। 
siraj ud doula, mirjafar
আবার সেই অনলাইন আলোচনায় ফিরে যাই। কথায় কথায় মীরজাফরের সমাধি ক্ষেত্রের কথা উঠলো। ভদ্রলোক আমাকে একটা অদ্ভুত জিনিস জানালেন। মীরজাফরের কবরের গায়ে নাকি লেখা রয়েছে যে "জুতো পরে কবরের ওপরে উঠুন"। আশ্চর্য তো! কারন আমার জানা মতে কারো কবর, মাজার বা সমাধিক্ষেত্রে গেলে, মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান জানিয়ে জুতো খুলে রাখতে হয়। কিন্তু এই কবরে শুয়ে থাকা লোকটার নাম যে মীরজাফর, তাই মরার পরও বেচারার শান্তি নেই। এখনো রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে ম্যাচ ফিক্সিং-এর মূল্য চুকিয়ে যেতে হচ্ছে।

Share