টেলিভিশনের জন্মের পর থেকেই এই মাধ্যমকে অনেকেই বোকা বাক্স হিসেবে মনে করেন। আর আজকের দিনে, যখন ভারতে ছ'শোর বেশী চ্যানেল সম্প্রচারিত হচ্ছে, তখন এই বিশেষণকে খুব একটা ভুলও বলা যায় না, বিশেষতঃ বেশীর ভাগ চ্যানেলেই শ্বাশুড়ি-বৌমা, পারিবারিক কলহ ইত্যাদি নিয়ে যখন একের পর এক সিরিয়াল বা "মেগা" চলতেই থাকে। সংবাদ পরিবেশনকারী চ্যানেলগুলোও টিআরপি (জনপ্রিয়তার মাপকাঠি) বাড়ানোর চক্করে একের পর এক "ব্রেকিং নিউজ" বানাতেই থাকে। এর ফলটা এই হয় যে, যেকোন ঘটনাকেই চ্যানেলের মাধ্যমে sensationalize করে জনগণকে খাইয়ে দেওয়া হয়, আর দর্শকরাও নিউজস্টোরিকে বিনোদনের এক অংশ বলেই মনে করেন।
এরকম একটা অবস্থায় হঠাৎ শুনতে পাওয়া গেলো যে আমির খানও নাকি ছোট পর্দায় আসছেন। ব্যাস, সাথেসাথেই হইচই আরম্ভ হয়ে গেলো। মিডিয়ার লোকেরা নিত্যনতুন খবর দিতে আরম্ভ করলেন এই সিরিয়াল নিয়ে। কিছুদিন পরে জানা গেলো যে সিরিয়ালটার নাম "সত্যমেব জয়তে", অর্থাৎ সত্যের জয় সর্বত্র। বলা হলো যে এটা একটা "রিয়ালিটি শো", অর্থাৎ বাস্তবিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত। আর এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় এবং ভারতীয়দের রোজকার জীবনে চলতে থাকা সামাজিক ব্যাধিগুলোকে নির্মূল করা।
সত্যমেব জয়তের সাথে যেহেতু আমির খান যুক্ত, তাই অনেকেরই আশা ছিলো যে এটা কোন গিমিক বা শস্তা প্রচারের লোভে করা অনুষ্ঠান হবে না। সত্যমেব জয়তে, সত্যি সত্যিই ভারতীয় সমাজে একটা পজিটিভ বদল আনবে বলে মনে করা হচ্ছিলো। প্রথম দিকের এপিসোডগুলোর জনপ্রিয়তা দেখে ও অনুষ্ঠানের ফলে অনেক রাজ্য সরকারও নড়েচড়ে বসায় এই আশা আরো উজ্জ্বল হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অনুষ্ঠান তার জনপ্রিয়তা আর ধরে রাখতে পারে নি। তবুও, এই অনুষ্ঠানের ফলে অনেকগুলো সামাজিক ব্যাধি এবং বে-আইনি কার্য্যকলাপের কথা সমাজ ও সাধারণ লোকের চোখের সামনে এসে পড়ে। আমির খান, তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের একদম সাধারণ শ্রেণীর লোকেদের মধ্যেও যেভাবে এই সামাজিক ক্ষতগুলোকে তুলে ধরেছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়।